January 7, 2025, 12:28 am
মো. আমজাদ হোসেন রতন, নাগরপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি: টাঙ্গাইলের নাগরপুরে অধিক লাভের আশায়, নতুনভাবে উৎসাহী কৃষকরা উপজেলার চরাঞ্চলে বসত বাড়ির পাশে ও পতিত জমিতে চলতি মৌসুমে ভুট্টা চাষে ব্যাপক সফলতা এনেছে। বাজার দাম ভালো পাওয়ার আশায় চাষীরাও খুশি রয়েছেন।
স্থানীয় চাষীরা জানান, উপজেলার যমুনা ও ধলেশ্বরী নদীর চরে অনেক জমি, বছরের পর বছর পতিত থাকে। এসব পতিত জমিতে তেমন কোন ফসল চাষ করা যায় না। তবে ঐসব জমিতে ভুট্টা চাষের উজ্জ্বল সম্ভবনা থাকায় চলতি মৌসুমে তারা(চাষী) চাষাবাদে আগ্রহী হয়ে পড়েন। সেই সাথে বাড়ির পাশে ফসল কম হওয়া বা পতিত জমিতে ভুট্টা চাষ করছেন অনেকেই।
উপজেলা কৃষি অফিস নাগরপুর সুত্রে জানা যায়, ১২টি ইউনিয়নে কমবেশি ভুট্টার আবাদ হয়েছে। উপজেলার বেটুয়াজানী, গয়হাটা, বেকড়া, তেবারিয়া, ধুবরিয়া, খাস ঘুনিপাড়া, ভারড়া, সহবতপুরসহ বিভিন্ন গ্রামে চলতি মৌসুমে এই ভুট্টা চাষ করা হয়েছে।
ডিসেম্বর মাসে বীজ বপনের পর এখন পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে। শেষের দিকে ভুট্টা ঘরে তোলা পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূল থাকবে বলে আশাবাদী। চরাঞ্চলে পলি মাটি পরে থাকা জমিতে বীজ বপনের পর থেকেই গাছ তরতর করে বেড়ে উঠতে থাকে। প্রতিটি গাছে ০২-০৩ টি করে ভুট্টার মোচা ধরেছে। চাষীরা গড়ে প্রতি মণ (৪০ কেজি) ভুট্টা ৯৫০-১০৫০ টাকায় বিক্রি করেন। চরের কোনো কোনো চাষী এককভাবে ৫ বিঘা পর্যন্ত জমিতে ভুটা চাষ করেছেন।
কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা আরও জানান, গত বৎসর প্রতি হেক্টর (সাড়ে সাত বিঘা) জমিতে গড়ে ৯-১০ মেট্রিক টন ভুট্টার ফলন হয়েছে। বিপনন করতে পুরুষ শ্রমিকদের পাশাপাশি নারীরাও দক্ষ হয়ে উঠায় এ কাজে তাদের কদর বাড়ছে।
উপজেলার বেটুয়াজানী গ্রামের সৌখিন কৃষক মো. শফিকুল ইসলাম শফি জানান, তিনি এবার প্রায় এক বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করেছেন।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সার্জেন্ট মো. নজরুল ইসলাম খান জানান, আমি অবসর গ্রহণের পর থেকেই কৃষিকাজে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছি এবং জৈব পদ্ধতিতে বিষমুক্ত সবজি চাষসহ এ বছর প্রায় ২ বিঘা জমিতে ভুট্টার চাষ করেছি। প্রতি বিঘা ভুট্টা চাষ ও কাটা মাড়াইয়ে মোট খরচ হবে ২৫-৩০ হাজার টাকা। প্রতি বিঘা জমি থেকে(ফলন ভাল হলে) ভুট্টা পাওয়া যাবে ৩৫-৪০ মণ পর্যন্ত। বাজার গুলোতে প্রতি মণ ভুট্টা ৯৫০ থেকে ১০৫০ টাকা দরে বিক্রয় হয়ে থাকে। গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার ভুট্টার বাম্পার ফলন হবে। সেই সাথে বাজারে দাম ও চাহিদা বেশি থাকায় এবার চাষীরা লাভবান হবেন।
উপজেলা কৃষি অফিসার জনাব ইমরান হোসাইন শাকিল বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান আবহাওয়ার প্রেক্ষিতে ভুট্টা চাষ এ উপজেলায় ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভুট্টার রয়েছে বহুমুখী ব্যবহার। উৎপাদন খরচ কম, ফলন বেশি, বাজার মূল্যও বেশি এবং চাষাবাদে ঝুঁকি তুলনামূলক কম হওয়ায় কৃষকেরা ভুট্টা চাষে আগ্রহী হচ্ছে। উপজেলায় এ বছর ১৮০০ হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদ হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১৬২০ হেক্টর।
চলমান অর্থবছরে প্রণোদনা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ১০০০ ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের মাঝে ভুট্টার বীজ এবং সার প্রদান করা হয়েছে। এছাড়াও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে চলমান বিভিন্ন কার্যক্রমের আওতায় কৃষকদের মাঝে ভুট্টার বীজ ও সার প্রদান করা হয়েছে ।
তিনি আরো জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং রোগ ও পোকামাকড় এর উপদ্রব কম হওয়ায় ভুট্টার ফলন আশানুরূপ হবে বলে বিশ্বাস করি। ভুট্টার আবাদ নির্ভীঘ্ন করার লক্ষ্যে কৃষি বিভাগ কৃষকদের পাশে থেকে, কৃষকদের প্রয়োজনীয় কারিগরি পরামর্শসহ সার্বিক সহযোগিতা প্রদানের মাধ্যমে নিবিড় ভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
নাগরপুর, টাঙ্গাইল